Who is involved in the murder of Nusrat Moni?

নুসরাত হত্যার সাথে জড়িত কে এই মনি?
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে জান্নাতুল আফরোজ মনি ও কামরুন নাহার মনি নামের দুই ছাত্রীকে। জানা গেছে,মামলার অন্যতম প্রধান আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমের জবানবন্দিতে উঠে আসে মনির নাম। আটক দুই মনির একজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুরুষ সহযোগীদের জন্য তিনটি বোরকা এনে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন।
মঙ্গলবার জান্নাতুল আফরোজ মনি ও কামরুন নাহার মনিকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। এই দুই ছাত্রীই এবার আলিম পরিক্ষায় দিচ্ছেন। তারা নুসরাতের সহপাঠিও।
গত রোববার নুসরাত জাহান রাফি হত্যার দায় স্বীকার করে মামলার প্রধান আসামি শামীমের জবানবন্দিতে মনির কথা উঠে আসে। শামীমের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বোরকাপড়াদের একজন মনি ছিল বলে জানিয়েছিলেন। তিনিই নুসরাতের গায়ে কেরোসিন দিয়ে প্রথমে আগুন দেন ।

শাহাদাত হোসেন শামীম দেওয়া স্বীকারোত্তির এই তথ্য জানিয়ে নুসরাত জাহান রাফির হত্যার মামলার পক্ষের স্বেচ্ছায় আদালতে আইনী লড়াই পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, কামরুন নাহার মনি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত একজন। তিনিই সহপাঠি নুসরাতের গায়ে কেরাসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। হত্যাকারী তার অপর তিন সহযোগী পুরুষের জন্য তিনটি বোরকা ও হাতমোজা সংগ্রহ করেছিলেন ঘটনার আগে। এটি মামলার অন্যতম প্রধান আসামি শামীমের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। এর জন্য তাকে দুই হাজার টাকা দেন সহপাঠী উন্মে সুলতানা পপি। পপিকে এই টাকা দিয়েছিলেন শামীম। হত্যাকাণ্ডের আগে এসব উপকরণ তারা শেল্টার হাউসের (ঘটনাস্থল) তিনতলার ছাদে রেখে আসেন।
ফেনী পিবিআই-এর অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান বলেন, গতকাল আটক দুই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হচ্ছে। একই সঙ্গে শামীম ও নুর উদ্দিনের আদালতে স্বীকারোত্তিমূলক জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করেও দেখা হচ্ছে। নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া সেই নারী কে তার সন্ধান খুব শিগগিরই মিলবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
শামীম ও নুর উদ্দিনের স্বীকারোক্তিতে জানা গেছে ,পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা শুরুর আগে তারা মাদ্রাসার শেল্টার হাউসের ছাদে থাকা টয়লেটে অবস্থান নেন। কেরোসিন ও ম্যাচও সেখানে রেখে আসা হয়। আলিম পরীক্ষা শুরুর আগে তারা উম্মে সুলতানা পপিকে দিয়ে কৌশলে নুসরাতকে ছাদে নিয়ে আসেন। এরপর নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
জবানবন্দিতে শাহাদাত হোসেন শামীম জানান, এ ঘটনার সময় নুরু উদ্দিন ও হাফেজ আবদুল কাদেরসহ আরও পাঁচজন গেটে পাহারায় ছিলেন। নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর শামীম দৌড়ে নিচে নেমে মাদ্রাসার উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যান। বাইরে গিয়ে তিনি সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে ফোনে বিষয়টি জানান।
নুর উদ্দিন আদালতকে জানিয়েছেন, তার সঙ্গে অধ্যক্ষ সিরাজের ভালো সম্পর্ক ছিল। এ কারণে তার নির্দেশে তারা পরিকল্পনা করে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ঘটনার সময় তিনি ভবনের নিচে ছিলেন। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগ্নি পপি নুসরাতকে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যান।
নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।
মামলার এজহারভুক্ত আটজনের মধ্যে সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুকছুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, যোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন ও মো. শামীম।
তবে হাফেজ আবদুল কাদের নামে এজহারভুক্ত আরও এক আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পিবিআই।
গত ৬ এপ্রিল শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় মুখোশ পরা চার-পাঁচজন নুসরাত জাহান রাফিকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তারা নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ১০ এপ্রিল বুধবার রাত ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি।
